কলকাতা – মুখ্যমন্ত্রী মানেই শ্রী – এর ছড়াছড়ি । এই যেমন ধরুন কন্যা’শ্রী – রুপো’শ্রী থেকে শুরু করে মেধা’শ্রী কিংবা রাস্তা’শ্রী । তবে এবার কোনও শ্রী’ নয় এবার সরাসরি আমার বাংলা । রাজ্য- দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর এবার টার্গেট বিদেশ । রাজ্য তথা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাঙালীদের জন্য তো আছেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর এবার লক্ষ্য প্রবাসী অর্থাৎ বিদেশের মাটিতে থাকা হাজার হাজার প্রবাসী বাঙ্গালীদের নিয়ে । প্রবাসী বাঙ্গালীদের সুবিধা দিতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চালু করলেন এক বিশেষ প্রকল্প । আসলে আমরা বাঙালী , বাংলা আমাদের সবার । তথাপি মা, মাটি, মানুষ। এই স্লোগান কে হাতিয়ার করেই তিন -তিন বার রাজ্যের মসনদে তৃণমূল সরকার। নিন্দুকের কাজ নিন্দা করা। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই মুখ্যমন্ত্রীর। যেন তেন প্রকারেণ রাজ্যের মানুষের মানুষের উন্নতি সাধনই এই সরকারের মূল লক্ষ্য। ইতিমধ্যেই গোটা রাজ্যের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নতির কথা মাথায় রেখে প্রায় ১০০ টির ওপর জনমুখি প্রকল্প চালু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিগত কয়েক বছর যাবত এই জনমুখি প্রকল্পগুলির কাজ চলছে জোর কদমে। গোটা রাজ্যের মানুষ এই প্রকল্পগুলি থেকে সুবিধাও পাচ্ছেন অকছর।
তবে মুখ্যমন্ত্রীর আসল ভোট ব্যাঙ্কের চাবিকাঠি রাজ্যের মহিলা বা মায়েদের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে। তাই মহিলাদের উন্নতির দিকে মুখ্যমন্ত্রীর নজর সর্বাগ্রে। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসে গোটা রাজ্যের মহিলাদের বিশেষ করে ঘরের গৃহিণীদের অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী করতে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো জনমুখি প্রকল্পের সুচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এই প্রকল্পের আওয়ায় গোটা রাজ্যের মহিলারা মাসে ৫০০- ১০০০ টাকা পর্যন্ত মাসিক ভাতা পান।
সম্প্রতি রাজ্য তথা দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতে থাকা লক্ষ লক্ষ বাঙালীদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী চালু করেছেন আমার বাংলা কার্ড । কিন্তু কি এই আমার বাংলা কার্ড ? এই কার্ডের সুবিধাই বা কি ? কি ভাবেই বা আবেদন করবেন ? চলুন তাহলে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক ।
‘আমার বাংলা কার্ড’ (AMAR BANGLA CARD ) কি
এটি এক টি বিশেষ পরিচিতি পত্র । সম্প্রতি রাজ্য সরকার দ্বারা এটি চালু করা হয়েছে প্রবাসী বাঙালী অর্থাৎ বিদেশের মাটিতে অবস্থান রত বা বসবাসকারী বাঙালীদের বিশেষ সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে ।
আমার বাংলা কার্ড- (AMAR BANGLA CARD ) থাকলে কি সুবিধা পাবেন ?
এই কার্ড থাকলে বাংলার মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলন, কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা, কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মতো নানা অনুষ্ঠানে যোগদানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বিদেশে বসবাসকারী বহু বাঙালী রাজ্যের উন্নতিতে যোগ দিতে ইচ্ছুক , খবর এমনটাই মূলত সেই কারণেই রাজ্য সরকার এই কার্ড চালু করার মাধ্যমে এবং প্রবাসী বাঙালী ও ভারতীয়দের বিশেষ পরিচয়পত্র প্রদানের মাধ্যমে রাজ্যে বিদেশী বিনিয়োগের পথ প্রসারিত করতে চাইছে সুত্রে খবর বলে । এই কার্ডে প্রবাসী বাঙালীদের সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যের উল্লেখ আকবে বলে জানা গিয়েছে সরকারি সুত্রে ।
আমার বাংলা কার্ডে (AMAR BANGLA CARD ) -র কি ভাবে আবেদন করবেন ?
ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার মারফৎ “আমার বাংলা’ কার্ডে” আবেদনের জন্য একটি পোর্টাল ও চালু করা হয়েছে বলে সুত্রের খবর । আবেদনের ক্ষেত্রে বিদেশের মাটিতে বসবাস কারি প্রবাসী বাঙালি এবং ভারতীয়রা নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে আবেদনকারীদের পাসপোর্ট নম্বর, পৃথক রেজিস্ট্রেশন নম্বর, কোন দেশের বাসিন্দা যাবতীয় তথ্য উল্লেখ থাকবে ।
তবে এই প্রথম নয় , রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষ্য যে ভিন রাজ্যের মাটি তার প্রমাণ মিলেছে সাম্প্রতিক মেঘালয় বিধান সভা নির্বাচনের প্রাক্কালে । আসলে বাংলার পর মুখ্যমন্ত্রীর লক্ষ্য মেঘালয় । আসলে ভোট বড় বালাই । তার ওপর রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রসারণ ।
আসলে ২০২৩ -য়েই রয়েছে দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যের পাশাপাশি মেঘালয় রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন । যতই হোক হাড় হিম ঠাণ্ডা, ভোটের ময়দানে রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়াতেই হবে । তাই এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে ভিন রাজ্য মেঘালয়ে নিজের রাজনৈতিক মাটি তৈরি করতে ছুটে গিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী স্বয়ং । সঙ্গে দলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ।
শুধুইকি দলীয় অবস্থান জানান দেওয়া, এর সাথে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেঘালয়ের মাটিতেও তার জনমোহিনী রুপ তুলে ধরতে এ রাজ্যের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো মেঘালয়ের মাটিতে উই কার্ড( WE CARD) চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন । তবে এক্ষেত্রে এ রাজ্যের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের অনুকরণে মেঘালয়ের মহিলাদের জন্য উই কার্ড চালু করার কথা বললেও তা একটু ভিন্ন রকম । কারণ মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে এরাজ্যের মহিলারা যেমন ক্যাটাগরি অনুযায়ী ৫০০ – ১০০০ টাকা পান । কিন্তু মেঘালয়ের মাটিতে উই কার্ড – এর ক্ষেত্রে ওই রাজ্যের প্রত্যেক মহিলাকেই মুখ্যমন্ত্রী ১০০০ টাকা মাসিক ভাতা দেওয়ার ঘোষণা করেছেন । অর্থাৎ তৃণমূল যদি মেঘালয়ের মাটিতে ক্ষমতায় আসে তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিশ্রুতি মতো ওই রাজ্যের প্রত্যেক মহিলাই মাসে মাসে এক হাজার টাকা মাসিক ভাতা পাবেন ।
তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই উই কার্ডকে বিরোধী বিজেপি অবশ্য অরবিন্দ কেজরিওয়ালের রেবড়ি কালচার অর্থাৎ অযথা স্বস্তা দান খয়রাতীর রাজনীতির সঙ্গে তুলনা করেছেন । কিন্তু সে দিকে কান দিতে নারাজ তৃণমূল নেত্রী । তিনি অবশ্য নিজের সিদ্ধান্তেই অবিচল । জানা গিয়েছে , মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণার পর পরই মেঘালয়ের মাটিতে বেশ সাড়া পড়েছে উই কার্ড (WE CARD) বিষয়টি নিয়ে । ইতিমধ্যেই ওই রাজ্যের প্রায় ১০ হাজার মহিলা উই কার্ড-র জন্য আবেদনও জানিয়েছেন । কারণ মেঘালয় সফরের কর্মসূচীর মধ্যেই ওই রাজ্যের কয়েকটি রাজনৈতিক কর্মসূচীতে প্রতিকি উই কার্ড মেঘালয়ের বেশ কয়েকজন মায়েদের হাতে তুলে দেন তৃণমূল নেত্রী । আর তাতেই বিষয়টি বেশ সাড়া পড়ে গোটা মেঘালয় জুড়ে । কিন্তু এ রাজ্যের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের অনুরুপ মেঘালয়ের মাটিতে উই কার্ড শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের ভোট বাক্সে ডিভিডেন্ড দেয় কিনা তার উত্তর মিলবে ২০২৩ -এ মেঘালয় বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে । আপাতত তৃণমূল নেত্রীর এই উই কার্ড নিয়ে গোটা মেঘালয়ের মহিলাদের মনে যে খুশির হাওয়া তা বলাই বাহুল্য । এবার আমার বাংলা কার্ড চালু করে তৃণমূল নেত্রী যেমন প্রবাসী বাঙালীদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবেই ব্যবহার করতে চাইছেন তেমনি শিল্পহীন বাংলায় উপযুক্ত শিল্প পরিবেশ গড়ে তোলাও যে মুখ্যমন্ত্রীর আসল লক্ষ্য তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা ।
written by – Somnath Pal.
More Job News : Click Here
Join Telegram Channel : Click Here
TAG- #LAKSHMI BHANDAR #PRAKALPA #WB #CM #MAMTA BANERJEE #WE CARD #AMAR BANGLA CARD # BANGALEE #BENGAL