নয়াদিল্লী- নয় নয় করে কেটে গিয়েছে বেশ কয়েকটা বছর। তবুও জনপ্রিয়তার খাতিরে দেশের অনেক প্রকল্পকে এক ধাক্কায় অনেকটাই পিছনে ফেলে দিয়েছে সরকারি এই প্রকল্প। আর দেবে নাই বা কেন । কারণ এই প্রকল্পে খুব কম অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করে যে কোনও ব্যক্তি তার ভবিষ্যৎ জীবন আর্থিক ভাবে সুনিশ্চিত করতে পারবেন খুব সহজে। সর্বোপরি বৃদ্ধ বয়সে আর্থিক ভাবে নিরাপদ থাকতে সরকারি এই প্রকল্পের জুড়ি মেলা ভার।
সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কর্মরত ব্যক্তিরা অবসর কালে মোটা টাকা পেনশন(pension) পান। কিন্তু দেশে সরকারি চাকুরিজীবী(govt employee) মানুষের সংখ্যা শতাংশের হারে খুব একটা বেশি নয়। তার ওপর ভারতবর্ষ মূলত কৃষি নির্ভরশীল দেশ। দেশে সরকারি চাকরিজীবী মানুষের চাইতে বেসরকারি কিংবা ছোটোখাটো ব্যবসাদার অথবা কৃষিজীবী মানুষের সংখ্যায় বেশি। এই অবস্থায় দেশের বেশির ভাগ মানুষের বৃদ্ধকালীন জীবন কে আর্থিক ভাবে সুরক্ষিত এবং সু নিশিত করতে বেশ কয়েক বছর আগেই পেনশন প্রকল্প চালু করা হয়েছে।
গত ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি প্রথম বারে কেন্দ্রের মসনদে পর দেশের প্রান্তিক মানুষের আর্থিক দৈনদশা কাটাতে বেশ কয়েকটি প্রকল্প(prakalpa) হাতে নেয়। এই প্রকল্পগুলির মধ্যে তালিকার প্রথম সারিতে রয়েছে অটল (atal pension yojna) পেনশন যোজনা। মূলত বিজেপির প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর নামাঙ্কিত এই প্রকল্পটি গত কয়েক বছরে দেশের শহরাঞ্চল থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামেও ছড়িয়ে গিয়েছে হু হু করে। কারণ প্রকল্পটি বেশ জনকল্যান মূলক সে বিষয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই।
তবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে পিপিএফ(ppf) অ্যাকাউন্টের কথা জানেন না এমন মানুষ বোধ করি খুঁজে পাওয়া যাবেনা। অটল পেনশন যোজনা মূলত পিপিএফ অ্যাকাউন্টের একটি বিশেষ সংস্করন বলা যায়। কারণ পিপিএফ অর্থাৎ পাবলিক(public provident fund) প্রবিডেন্ট ফান্ড মূলত বৃদ্ধ বয়সে আর্থিক ভাবে সুনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই তৈরি করা হয়েছিল বেশ কয়েক দশক আগে। তারপর অবশ্য কেটে গিয়েছে বেশ কয়েক দশক। বৃদ্ধ কালে আর্থিক ভাবে নিরাপদ এবং স্বাচ্ছন্দে থাকতে দেশের অনেক মানুষই পিপিএফ অর্থাৎ পাবলিক প্রবিডেন্ট ফান্ডের সুবিধা ইতিমধ্যেই গ্রহণ করেছেন। পাশাপাশি পিপিএফের ধাঁচে অটল পেনশনের সুবিধা নিয়েছেন দেশের বেশির ভাগ প্রান্তিক দিন মজুর মানুষ। কিন্তু এই পেনশন প্রকল্প আসলে কি যা একলব্ধে আপনার বৃদ্ধকালীন(old age pension) ভবিষ্যৎ কে আর্থিক ভাবে নিরাপদে রাখতে পারে?
এ বিষয়ে সরকারি তরফে ঘোষণা করা হয়েছে, এই প্রকল্পের আওতায় ১৮ বছর বয়স থেকে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত কোনও ব্যক্তি যদি তার ৬০ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত প্রতিমাসে নিয়ম করে টাকা জমাতে পারেন তাহলে ওই ব্যক্তির ৬০ বছর পার হওয়ার পর থেকে তিনি প্রতিমাসে নিয়ম করে পেনশন পাবেন। তবে এক্ষেত্রে ওই আর্থিক পেনশনের পরিমাণ প্রতি মাসে নুন্যতম ১০০০ টাকা, পেনশনের ঊর্ধ্ব সীমা ৫০০০ টাকা। কিন্তু এ বিষয়ে যে কথাটি না বললেই নয় সেটি হল, ৪০ বছর পেরিয়ে গেলে আর কোনও ব্যক্তি এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন না, অর্থাৎ ৪০ বছর অতিক্রান্ত কোনও ব্যক্তি এই প্রকল্পে নাম লেখাতে পারবেন না।
এবার দেখে নেওয়া যাক পেনশন প্রকল্পটির যাবতীয় নিয়মবিধি ও তথ্য সম্পর্কে—
1) অটল পেনশন যোজনা টি মূলত ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সের ব্যক্তিদের জন্য উপলব্ধ।
2) এই প্রকল্পের ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি তার ৬০ বছর বয়সে বৃদ্ধকালীন অবস্থায় প্রতিমাসে কত টাকা পেনশন চান তা ওই ব্যক্তিকেই ঠিক করতে হবে।
3) ৬০ বছর পর্যন্ত ওই ব্যক্তিকে প্রতিমাসে নিয়ম করে সরকারের ঘরে টাকা জমাতে হবে। ওই ব্যক্তির ৬০ বছর পর্যন্ত জমাকৃত টাকার ওপর সরকার সুদ সহ ওই ব্যক্তিকে মোট টাকার হিসাবে তার ওপর প্রতিমাসে পেনশন প্রদান করবে সরকার ।
4) যদি ওই ব্যক্তি কোনও কারণে মারা যান তাহলে ওই ব্যক্তির নামাঙ্কিত নমিনি কে সরকার সুদ সহ এককালীন সব টাকা ফেরত দিতে বাধ্য থাকিবে। অর্থাৎ নমিনি কে সব টাকা সুদ সহ ফিরিয়ে দেবে সরকার।
5) প্রকল্পটি দেশের সব কয়টি পোস্ট অফিস এবং ব্যাঙ্কে উপলব্ধ রয়েছে। অর্থাৎ নিকটবর্তী যেকোনো রাস্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্ক এবং পোস্ট অফিস মারফৎ দেশের যে কোনও ব্যক্তি এই প্রকল্পের সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন।
6) এই প্রকল্পে পেনশনের পরিমাণ সর্ব নিম্ন ১০০০ টাকা সর্বোচ্চ ৫০০০ টাকা।
7) এই প্রকল্পে জমা হওয়া টাকা কর মুক্ত অর্থাৎ ট্যাক্স (tax free)ফ্রি।
8) এক্ষেত্রে ওই ব্যক্তিকে যে কোনও পোস্ট অফিস অথবা ব্যাঙ্কের শাখায় নিজের নামে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।
এবার জেনে নেওয়া যাক প্রকল্পটির টাকার অঙ্কের হিসাব—
ধরা যাক, কোনও ব্যক্তির বয়স ১৮ বছর। ওই ব্যক্তি যদি বৃদ্ধ বয়সে ৫০০০ হাজার টাকা পেনশন চান। তাহলে ওই ব্যক্তিকে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিমাসে সরকারের ঘরে জমা করতে মাত্র ২১০ টাকা। অর্থাৎ ওই ব্যক্তিকে দৈনিক জমা করতে মাত্র ৭ টাকা। এই ভাবে ওই ব্যক্তি যদি ৬০ বছর বয়স থেকে প্রতিমাসে ১০০০ টাকা পেনশন চান তাহলে ওই ব্যক্তিকে প্রতিমাসে সরকারের ঘরে জমা করতে মাত্র ৪২ টাকা। দিন প্রতি তা দেড় টাকার ও কম।
তাহলে আর দেরি না করাই ভালো। যদি বৃদ্ধ কালে আপনি আপনার ভবিষ্যৎ জীবনকে আর্থিক ভাবে নিরাপদে রাখতে চান তাহলে এখনই নিকতবর্তী পোস্ট অফিস কিংবা ব্যাঙ্কের শাখায় গিয়ে যোগাযোগ করুন অতি শীঘ্র।
written by- Somnath Pal
More Job News : Click Here
Join Telegram Channel : Click Here
TAG – #ATAL PENSION YOJNA #PPF # GOVT #PRAKALPA #PENSION PRAKALPA