কলকাতা : দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান । অবশেষে রাত্রে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী । এ কথার বিশেষ তাৎপর্য আছে বৈ কি । আসলে তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী । মাত্র কয়েক মাস আগেই জেলা ভিত্তিক এক প্রশাসনিক সভা মঞ্চ থেকে দ্যার্থ হীন ভাবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার আর স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ডের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে তার রাতের ঘুম উধাও হয়ে যাচ্ছে । এবার বুঝি সব চিন্তার অবসান হল । কারণ টা অবশ্য বেশ স্পষ্ট। বেলাগাম দুর্নীতির অভিযোগে বেশ কয়েক মাস যাবত ধরে এ রাজ্যের বরাতে একশো দিনের কাজের টাকা বন্ধ করেছিল কেন্দ্র। কিন্তু চলতি জানুয়ারি থেকে পরপর রাজ্যের বরাদ্দ খাতে টাকা ঢুকতে শুরু করেছে কেন্দ্র সরকার মারফৎ । এ বিষয়ে রাজ্যের বিরোধী দলের নেতা -নেত্রীদের অভিযোগ একশো দিনের কাজের টাকা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে খরচ করে দিয়েছে রাজ্য সরকার । কিন্তু বিরোধীদের সেই অভিযোগে আমল দিতে নারাজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । ফলত ফের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে গোটা রাজ্যের গৃহিণীদের উদ্দেশ্যে বড় ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী ।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মতো জানুয়ারি মাসেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা রাজ্যের গৃহিণীদের অ্যাকাউন্টে ঢুকে যাবে । সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এ মাসের শেষ সপ্তাহে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের আওতায় নিজেদের পাওনা গণ্ডা বুঝে নিতে সক্ষম হবেন রাজ্যের লক্ষ লক্ষ গৃহিণী । জদিও বা রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডি এ মামলা ঝুলছে সুপ্রিম কোর্টের দরজায় । তাতে অবশ্য ভ্রুক্ষেপ নেই মুখ্যমন্ত্রীর ।
আসলে মা, মাটি, মানুষ। এই স্লোগান কে হাতিয়ার করেই তিন -তিন বার রাজ্যের মসনদে তৃণমূল সরকার। নিন্দুকের কাজ নিন্দা করা। সেদিকে নজর দিতে নারাজ মুখ্যমন্ত্রী। যেন তেন প্রকারেণ রাজ্যের মানুষের মানুষের উন্নতি সাধনই এই সরকারের মূল লক্ষ্য। ইতিমধ্যেই গোটা রাজ্যের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নতির কথা মাথায় রেখে প্রায় ৭০ টির ওপর জনমুখি প্রকল্প চালু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিগত কয়েক বছর যাবত এই জনমুখি প্রকল্পগুলির কাজ চলছে জোর কদমে। গোটা রাজ্যের মানুষ এই প্রকল্পগুলি থেকে সুবিধাও পাচ্ছেন অকছর।
তবে মুখ্যমন্ত্রীর আসল ভোট ব্যাঙ্কের চাবিকাঠি রাজ্যের মহিলা বা মায়েদের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে। তাই মহিলাদের উন্নতির দিকে মুখ্যমন্ত্রীর নজর সর্বাগ্রে। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসে গোটা রাজ্যের মহিলাদের বিশেষ করে ঘরের গৃহিণীদের অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী করতে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের (Lakshmir Bhandar)মতো জনমুখি প্রকল্পের সুচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
এই প্রকল্পের আওয়ায় গোটা রাজ্যের মহিলারা মাসে ৫০০- ১০০০ টাকা পর্যন্ত মাসিক ভাতা পান। এ ক্ষেত্রে সাধারণ ক্যাটাগরির মহিলারা মাসে ৫০০ টাকা এবং তপশিলি জাতী -উপজাতি সম্প্রদায়ের সকল মহিলা মাসে ১০০০ টাকা পান মাসকাবারি। কিন্তু সাম্প্রতিক অগ্নি মুল্যের বাজারে ৫০০- ১০০০ টাকায় কি হয়। সেই চিন্তা করেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে সাম্প্রতিক টাকা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার।
ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর লক্ষ্মীর ভাণ্ডার (Lakshmir Bhandar) প্রকল্পের জন্য স্কচ পুরস্কার (Skoch Award) পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। মহিলা ও শিশু কল্যাণের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পকে প্লাটিনাম সম্মান দিয়েছে স্কচ। রাজ্যের নারী ও শিশু কল্যাণ দফতর ও সমাজ কল্যাণ দফতরকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই টুইট করে এই সুখবরের কথা জানিয়েছেন। সঙ্গে তিনি লিখেছেন, “মহিলাদের ক্ষমতায়নকে আমরা সবসময় গুরুত্ব দিয়ে দেখেছি। এই প্রাপ্ত শুধু রাজ্য সরকারের নয়, গোটা পশ্চিমবঙ্গের ১.৮ কোটি মহিলার, যাঁরা আজ নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন।”
তবে রাজ্যে এতদিন লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের সুবিধা পেতেন না বিধবা মহিলারা। তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল বিধবা ভাতা। সেই ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বয়সের বিধিনিষেধ ছিল না। এই প্রকল্পের অধীনে মাসিক ৪০০ টাকা ভাতা পান মহিলারা। তবে এক্ষেত্রে রয়েছে কিছু শর্ত, লক্ষ্মীর ভান্ডার পেতে গেলে বিধবা মহিলার বয়স হতে হবে অন্তত ২৫ বছর। ৬০ বছর পর্যন্ত ভাতা পাবেন তিনি। সরকারি সুত্র মারফত জানা গিয়েছে, এবার থেকে তপশিলিজাতিভুক্ত বিধবা মহিলারা মাসে ১,৪০০ টাকা ও অন্যান্য শ্রেণির বিধবা মহিলারা মাসে ৯০০ টাকা পাবেন।
যদিও পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত ভোট কেনার চেষ্টা বলে দাবি করেছে বিরোধীরা। তাদের দাবি, রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ দিচ্ছে না সরকার। কয়েক মাস পর থেকে বেতন দিতে পারবে কি না তার ঠিক নেই। ওদিকে ভোট কেনার জন্য খয়রাতি চালু রেখেছে তারা।
written by – Somnath Pal.
More Job News : Click Here
Telegram Channel : Click Here
TAG- #LAKSHMI BHANDAR #PROKALPA #WB #CM #MAMTA BANERJEE