কলকাতা – যত দিন যাচ্ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সংঘাতের আবহ । সরকারি কর্মীদের প্রতি রাজ্য সরকারের যেমন অনমনীয় মনোভাব তেমনি রাজ্য সরকারি কর্মীরাও তাদের অবস্থানে অনড় । তবে শুরু টা হয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে । দিনের পর দিন রাজ্য সরকার ও রাজ্য সরকারি কর্মীদের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমশ অবনতির পথে । সম্প্রতি রাজ্য সরকার ও সরকারি কর্মীদের মধ্যে একে অন্যকে দেখে নেওয়ার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছেন । আর তা নিয়েই রাজ্যের কর্ম সংস্কৃতি প্রায় শিকেয় ওঠার জোগাড় ।
ইতিমধ্যেই আন্দোলনরত রাজ্য সরকারি কর্মীদের সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের তরফে ২০ এবং ২১ শে ফেব্রুয়ারি গোটা রাজ্য জুড়ে কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয় । তা নিয়ে অবশ্য ঘটনার ঘনঘটা কম হয়নি । আন্দোলনরত রাজ্য সরকারি কর্মীদের কর্মবিরতি রুখে দিতে পাশাপাশি রাজ্যের কর্ম সংস্কৃতির ধারাকে অব্যাহত রাখতে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দেয় রাজ্য সরকার । ওই দু’দিন কাজে যোগ না দিলে রাজ্য সরকারি কর্মীদের চাকরি জীবনে এক দিনের ‘কর্মচ্ছেদ-র’ অর্থাৎ ‘ব্রেক ইন সার্ভিস’ – এর মতো কড়া পদক্ষেপ নিতেও যে রাজ্য সরকার পিছুপা হবে না সেকথা আন্দোলনরত কর্মীদের উদ্দেশ্যে জানিয়ে দেয় নবান্ন । কিন্তু তাতেও যে রাজ্য সরকারি কর্মীরা ভীত নন এমনকি পাল্টা রাজ্য সরকারকেই এই আন্দোলনের অধিকার নিয়ে আইনি হুঁশিয়ারি দেয় সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ । পাশাপাশি রাজ্য সরকার মারফৎ জারি করা নোটিশকে এক প্রকার ফুঁৎকারে উড়িয়ে দিয়ে গত দু’দিন রাজ্য জুড়ে কর্ম বিরতির পথেই হেঁটেছে রাজ্য সরকারি কর্মীরা । কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতি যে কে সেই । রাজ্য সরকারি কর্মীদের প্রতি সরকার যে বেশ উদাসীন তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা । কিন্তু আন্দোলনরত রাজ্য সরকারি কর্মীরা ও তাদের ন্যায্য পাওনা গণ্ডা বিশেষ করে বকেয়া ডিএ – র দাবিতে হাল ছাড়তে নারাজ । ফলস্বরুপ উদাসীন রাজ্য সরকারের বিমাতৃ সুলভ আচরণের বিরুদ্ধে এবার নতুন কৌশল নিতে চলেছে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত রাজ্য সরকারি কর্মী ইউনিয়নের প্রায় ৩৮ টি সংগঠন ।
কি সেই নতুন কৌশল যা নিয়ে গোটা রাজ্যের কর্ম সংস্কৃতি শিকেয় উঠতে পারে ? এ বিষয়ে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের তরফে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই গোটা রাজ্য জুড়ে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে । যা নিয়ে ইতিমধ্যেই উদ্বিগ্ন রাজ্য সরকার । তা হওয়ায় স্বাভাবিক । কারণ এখন শুধু বামপন্থী কিংবা বিজেপির কর্মী সংগঠনই নয় , দিন যত এগোচ্ছে রাজ্যের শাসক দলের কর্মী ইউনিয়নের কর্মীরাও এই আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করছেন । আর এই বিষয়টিই যে রাজ্য সরকারের কাছে বেশ মাথা ব্যাথার কারণ তা আর বলাই বাহুল্য । সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ৯ই মার্চ গোটা রাজ্য জুড়ে ধর্মঘটের ছবি ধরা পড়বে এ কথা হলফ করে বলা যায় । কারণ ওই দিনই রাজ্যের সর্বত্র অর্থাৎ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ ।
এ বিষয়ে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের তরফে বলা হয়েছে “ধর্মঘট বলতে আমরা এক্ষেত্রে সমস্ত দফতরের কর্মবিরতির কথা বলছি। দোকানপাঠ বা যানবাহন চলাচল বন্ধের বিষয় নয়। আমরা সরকারি কর্মীদের ৩৮টি সংগঠন মিলে এই আন্দোলনের ডাক দিয়েছি। এই দিন স্কুল, কলেজ থেকে শুরু করে অন্যান্য সমস্ত সরকারি দফতরে কাজ বন্ধ রাখা হবে।” পাশাপাশি তারা আরও বলেন , “আমরা ধর্মঘটকে সমর্থন জানাচ্ছি। রাজ্য সরকার দিনের পর দিন সরকারি কর্মীদের সঙ্গে বঞ্চনা করছে। DA সরকারি কর্মীদের প্রাপ্য। তা তাঁদের দিতেই হবে।”
ঘটনার সুত্রপাত মাত্র ৩ শতাংশ ডি এ ঘোষণার পর থেকেই । সম্প্রতি রাজ্য বাজেটে সরকারি কর্মীদের জন্য ৩ শতাংশ ডি এ ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার । আর আর তার পরেই রাজ্য সরকারি কর্মীদের আন্দোলনের মাত্রা আরও তীব্র । এ বিষয়ে সম্প্রতি রাজ্য সরকার ঘোষিত ৩ শতাংশ ডিএ- কে ভিক্ষার দান বলে কটাক্ষের সুর শোনা গিয়েছে রাজ্য সরকারি কর্মীদের মুখে । পাশাপাশি মাত্র তিন শতাংশ ডিএ অর্থাৎ রাজ্য সরকারের এই দয়ার দান যে তারা যে কোনও মতেই গ্রহণ করবেন না সে কথাও আন্দোলন রত সরকারি কর্মীরা স্পষ্ট করেছেন ইতিমধ্যেই ।
রাজ্য সরকারি কর্মীদের দাবি একটাই , কেন্দ্রীয় হারে তাদের ডিএ দিতে হবে । এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে এক প্রকার জেহাদ ঘোষণা করে বিধানসভা অভিযানের ডাক দেয় আন্দোলনকারী রাজ্য সরকারি কর্মী ইউনিয়নের ২৮ টি সংগঠন । পাশাপাশি ২০ – ২১ ফেব্রুয়ারি সোম ও মঙ্গলবার সপ্তাহের প্রথম দু’দিন গোটা রাজ্য জুড়ে কর্ম বিরতির ডাক দেয় সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ ।
তবে আন্দোলন, আবেদন -নিবেদন যাই চলুক আগামী ১৫ ই মার্চ সুপ্রিম কোর্টে ডি এ মামলার শুনানি । কিন্তু ওই দিন শেষ পর্যন্ত শুনানি হবে কিনা তা নিয়ে ইতিমধ্যেই সংশয় তৈরি হয়েছে রাজ্য সরকারি কর্মী মহলে । কারণ ওই দিন যদি রাজ্য সরকারের দায়ের করা মামলা সুপ্রিম কোর্টে গৃহীত হয় তাহলে DA মামলার নিস্পত্তি যে এখনই হবে না সে বিষয়ে আর বুঝতে কারও বাকি নেই । আবার একাধিক আইনজীবীর মতে সুপ্রিম কোর্ট যদি মামলার শুরুতেই বিসর্জনের ঘণ্টা বাজিয়ে দেয় অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকারের দায়ের করা মামলা যদি শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে তাহলে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একেবারে সোনায় সোহাগা । কারণ তাহলে রাজ্য সরকার কে ২০২২ সালে ২২ মে কলকাতা হাই কোর্টের রায়কেই মান্যতা দিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া দাবি দাওয়া মিটিয়ে দিতে হবে । শেষ পর্যন্ত ১৫ ই মার্চ কি হয় সে দিকেই চাতক পাখির মতো চেয়ে রয়েছেন রাজ্য বঞ্চিত রাজ্য সরকারি কর্মচারি বৃন্দ ।
আসলে গত বছরের শেষের দিকে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের জন্য সপ্তম বেতন কমিশন লাঘু করেছে কেন্দ্র সরকার । আর তাতেই সপ্তম বেতন কমিশন অনুযায়ী কেন্দ্র সরকারি কর্মীদের বর্তমান DAএর পরিমাণ ৩৮ শতাংশ । আগামী দিনে ৩- ৪ শতাংশ বেড়ে তা পৌঁছে যাবে ৪২ -এর কোটায় । সেখানে রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডি এ – এর পরিমাণ মাত্র ৬ শতাংশ । কিন্তু এতো কিছুর পরও যে রাজ্য সরকারি কর্মীদের একমাত্র ভরসার জায়গা সেই আদালত তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। কারণ , রাজ্য সরাকারি কর্মীদের ডি এ মামলা আপাতত ঝুলে রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের দরজায় । আদালতের নির্দেশ মতো আগামী ১৫ই মার্চ পরবর্তী শুনানি । কখনও পথে নেমে আন্দোলন কখনও স্যাট অর্থাৎ স্ট্রেট অ্যাড মিনিস্ট্রেটিটিভ ট্রাইবুন্যাল আবার কখনও কলকাতা হাইকোর্টের দরজায় কড়া নেড়েও শেষ পর্যন্ত তাদের ন্যায্য পাওনা অর্থাৎ বকেয়া ডি এ -র পাওনা গণ্ডা থেকে এখনও বঞ্চিত রাজ্য সরকারি কর্মীরা ।
written by – Somnath Pal.
More Job News : Click Here
Telegram Channel : Click Here
TAG – #DA #GOVT #SALARY #DEARNESS ALLOWANCE #WB